জুলাই অভ্যুত্থানে প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ৩০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সোমবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উঠে এসেছে যে, এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান নির্দেশদাতা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ বাচ্চুসহ চারজন ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থেকে যৌথভাবে আবু সাঈদকে হত্যার নির্দেশনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এএসআই আমীর হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য সদস্যদের মাধ্যমে গুলি চালিয়ে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। এছাড়া অন্য ২৬ জন আসামি তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ হত্যাকাণ্ড, আক্রমণ ও নির্যাতনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহায়তা করেন।
আমরা জানি, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ১৬ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে আবু সাঈদ হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশের আক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে তিনি এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। এ সময় পুলিশ খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। আবু সাঈদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে গুলি করার ভিডিও সেদিনই গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিন থেকেই সারা দেশে তীব্র গতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে সারা দেশে আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। এর পরিণতিতে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাজেই পুলিশের সামনে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের সাহসের প্রতীক। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও পুলিশের সামনে যেভাবে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়েছিলেন, এমন বীরত্ব অকল্পনীয়। কাউকে তিনি আক্রমণ করেননি; তবুও হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ সরাসরি তাকে গুলি করে। এ হত্যার ঘটনাসহ জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের প্রতিটি ঘটনার ন্যায়বিচার হওয়া জরুরি।
স্বস্তির বিষয়, জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হওয়া এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিচারের জন্য যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সেই গতিতেই বিচার এগোচ্ছে। এটাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা এবং পাশাপাশি ন্যায়বিচারের সব স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করা-এ দুটোকে মেইনটেইন করে আমরা চলছি।’ কাজেই আমরা আশা করছি, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কোনো কারণ ঘটবে না। দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে, সর্বোপরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আবু সাঈদসহ জুলাই অভ্যুত্থানের সব হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, এটাই কাম্য।