সম্প্রতি রাজধানীর গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় অবৈধ সিসা বারগুলো ফের চালু করার জন্য প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের তরফ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (নারকোটিক্স) ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা গভীরভাবে উদ্বেগজনক। সিসা সেবনকে কেন্দ্র করে যে শুধু জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার গুরুতর অবনতি ঘটছে তা নয়, বরং আইনের শাসন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শনিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-রাজধানীতে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি সিসা বার খুলে দিতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙিয়ে, এমনকি নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করেও অনেকে তদবির চালাচ্ছে। বলা বাহুল্য, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের নাম এই অবৈধ কার্যক্রমে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই আশঙ্কার বিষয়।
সাবেক মন্ত্রীপুত্র, সাবেক মেয়রের মেয়ে এবং প্রভাবশালী শেখ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় এটা স্পষ্ট করে যে, এই ব্যবসা সমাজের উচ্চস্তরে ভালোভাবেই গেঁথে গেছে। সিসা সেবন যে আপাত নিরীহ কোনো বিনোদন নয়, বরং স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর এবং মারাত্মক আসক্তির কারণ, তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষক স্পষ্ট জানিয়েছেন, সিসার এক পাফে প্রায় ২০০ সিগারেটের সমপরিমাণ নিকোটিন থাকে, যা ক্যানসার ও বন্ধ্যত্বের মতো গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। উপরন্তু, সিসা বারের আলো-আঁধার পরিবেশ তরুণ-তরুণীদের নৈতিক স্খলনে উৎসাহিত করে এবং ইয়াবা ও আইসের মতো ভয়ংকর মাদকের দিকে ঠেলে দেয়।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিসা বারের মতো অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা রাতারাতি ভোল পালটে নতুন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, সিসার মতো এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে কতিপয় অসাধু আইনজীবী, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা এবং হলুদ সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট যুক্ত হয়ে নারকোটিক্স কর্মকর্তাদের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে। এ বাস্তবতা প্রমাণ করে, অবৈধ ব্যবসাটির জাল কতদূর বিস্তৃত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী সিসায় নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি নিকোটিন থাকলে তা ‘খ’ শ্রেণির মাদক। এমন অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এমন অবস্থায় আইন থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালীরা যখন প্রতিষ্ঠান বন্ধের পর ফের চালু করতে চাপ দেন, তখন বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া কেবল নারকোটিক্সের একার পক্ষে এই মাফিয়া চক্রকে ঠেকানো অসম্ভব।
আমরা মনে করি, অবৈধ সিসা বার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে প্রভাবশালীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। শুধু প্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, বরং তদবিরকারী, নেপথ্যের অর্থদাতা ও তাদের রাজনৈতিক শেলটারদাতাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে উচ্চপর্যায়ের পূর্ণ সমর্থন দিয়ে তাদের মনোবল অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। অন্যথায়, অবৈধ সিসা বারের আগ্রাসন দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে এবং আইনের প্রতি জনগণের আস্থা হুমকির মুখে ফেলবে। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।