আদালত অবমাননার মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এ আদেশ দেন। এ মামলার অপর আসামি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা, মামলার বাদী ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো এবং হুমকি দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আইনে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম কোনো মামলায় শেখ হাসিনার কারাদণ্ড হলো। আইন অনুযায়ী যেদিন তারা আত্মসমর্পণ করবেন অথবা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হবেন সেদিন থেকে এ সাজা কার্যকর হবে।

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা শাকিলের কথিত টেলি আলাপের একটি অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার এই মামলা হয়। ওই অডিও টেপে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৬টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সত্যতা পাওয়ার কথা জানায়। সেই মামলায় চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হয়।

আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন কথোপকথনে, শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে হুমকি দেননি। জুলাই অভ্যুত্থানের ঘটনায় সারা দেশে যেসব মামলা হয়েছে-সেসব মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা, ভিকটিম, সাক্ষী, প্রকারান্তরে সবাইকেই তিনি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারীদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করতে রাষ্ট্রীয় সব বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বস্তুত গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী সব অপরাধের প্রধান পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা ও সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশে অনেক মামলা হয়েছে। কয়েকটি মামলায় ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার মধ্যে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মোকাবিলা করবেন, দেশবাসী এটাই দেখতে চায়। তিনি তা না করলে কর্তৃপক্ষের উচিত, ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া এবং তাকে আইনের আওতায় আনা। শেখ হাসিনার নির্দেশে আলোচিত অপরাধগুলো সংঘটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন তাদেরও যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় আনতে হবে।

সূত্র, যুগান্তর