বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর গত এক বছরেও শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা না ফেরা দুর্ভাগ্যজনক। জানা যায়, শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন স্তরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি রয়েছে। হাসিনা সরকারের পতনের পর স্বভাবতই আওয়ামী মতাদর্শের অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয় বিভিন্ন দপ্তরে। এছাড়া অনেকে অবসরে গেছেন। এর ফলে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হলেও তা পূরণ করা হয়নি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। কোনো কোনো দপ্তরে প্রায় অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এর খেসারত দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের। কোনো দপ্তরে পর্যাপ্ত জনবল না থাকলে কাজে ব্যাঘাত ঘটা বা সমস্যা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে কোনো দপ্তরের প্রধান যদি না থাকেন, তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। দেখা দিতে পারে অনিয়ম-দুর্নীতি। হয়েছেও তা-ই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানের পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি। ফলে এ প্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে স্থবিরতা। চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর কাজও থেমে আছে। প্রশ্ন হলো, নীতিনির্ধারকরা এদিকটিতে কেন দৃষ্টি দিচ্ছেন না? কেন পদগুলো শূন্য রাখা হচ্ছে?

দুর্ভাগ্যজনকই বলতে হয়, আমাদের দেশে শিক্ষা সবচেয়ে অবহেলিত খাতগুলোর একটি। বছরের পর বছর শিক্ষা খাতকে গুরুত্বহীন করে রাখায় সমাজে শিক্ষা ও শিক্ষকদের মর্যাদা ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু এখন তো দেশে পরিবর্তন এসেছে, শিক্ষাক্ষেত্রেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়ার কথা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের সংস্কারকে এ তালিকায় স্থান দেওয়া হয়নি। অথচ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শিক্ষা খাতের আশু সংস্কারের বিকল্প নেই।

শিক্ষাকে একটি জাতির মেরুদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অথচ এ খাতকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা খাতে অবহেলার আরেকটি দিক হচ্ছে, এ খাতে আমরা পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী নই। অথচ শিক্ষায় ব্যয় করার মানে হলো ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করা। শিক্ষা খাতকে অবহেলা করে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারেনি। তাই এ খাতের সমস্যাগুলো নিরসনে সবার আগে মনোনিবেশ করা উচিত।

সূত্র, যুগান্তর