সেদিনও বাম ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রলীগের ডানার নিচে নিরাপদে ছিল। তারা ছাত্রদলের করুণ অবস্থা নিয়ে হাসাহাসি করেছে। একটি বিবৃতিও দেয়নি। জুলাই বিপ্লবের পর বামদের যখন ফ্যাসিবাদের সহযোগী হওয়ার অপরাধের দায় নেয়ার সময়, তখন তারা মনে হয় ছাত্রদলের ছত্রচ্ছায়া পাচ্ছে। সে কারণেই ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রদর্শনী নিয়ে ছাত্রদল বামদের লাইনে বিবৃতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বামদের খাস তালুকদারি চলছে। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নিয়ম-কানুন, আচরণ-বিধি প্রণয়নে তারা একক আধিপত্য বিস্তার করেছে। এ পর্যন্ত তারা পেছন থেকে সফলভাবে সব নিয়ন্ত্রণ করেছে। বড় দলগুলোর কাঁধে ভর দিয়ে তারা এটি করতে পেরেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারা রাজনীতি করতে পারবে সেটিও তারাই ঠিক করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দীর্ঘ দিন রাজনীতি করতে দেয়নি।
শিবিরের বিরুদ্ধে তারা সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে। তাদের দাবি- শিবির ক্যাম্পাসে রাজনীতি করলে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হবে। বাস্তবে দেখা যায়, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিবির ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে সেখানেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হয়েছে। নারী নির্যাতন, ইভটিজিং বন্ধ থেকেছে। সেসব ক্যাম্পাসে গেস্টরুম সংস্কৃতি চালু হয়নি, গণরুম তৈরি করে ছাত্রদের গাদাগাদি করে রেখে জিম্মি করে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করার সংস্কৃতি চালু হয়নি। অর্থাৎ শিবিরের অবস্থান শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখতে সহায়ক হয়েছে। অন্য দিকে বামদের ষড়যন্ত্রে শিবিরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডাকাতদের গ্রাম’ আখ্যা পেয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বামদের গর্বের শেষ নেই। এ ক্যাম্পাসে জনবলে তারা কিছু বেশি। এখানে তারা ছাত্র-শিক্ষকসহ সবাইকে শিবিরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। পরিস্থিতি এতটা নাজুক করে তোলে যেন শিবির এক দানব ছাড়া কিছু না। ১৯৮৯ সালে যেই কবির হত্যাকাণ্ডকে কাজে লাগিয়ে বামরা শিবির বিতাড়নে সফল হয়, সম্প্রতি সেই ঘটনার গোমর ফাঁস হয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, কবিরকে হত্যার খবর সত্য ছিল না। কবিরের বোনও এই সত্য জানিয়েছেন। তিনি সংঘর্ষে আহত হন, মারা যাননি। ক’দিন পরে কেউ তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করে। অথচ কবির হত্যার দায় চাপিয়ে শিবির নেতাকর্মীদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তাদের প্রকাশ্য রাজনীতি বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েক বছরের মাথায় আবারো শিবির প্রকাশ্যে কাজ করতে চাইলে বামদের উসকানিতে তাদের ওপর আক্রমণ হয়। পরে পুলিশ দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়, মামলা দিয়ে স্থায়ীভাবে উৎখাত করা হয়। ওই সময় শিবির করার কারণে বহু শিক্ষার্থীর ছাত্রজীবন ধ্বংস করে দেয়া হয়। তারা ক্লাস-পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পাসে ফিরে আসতে পারেনি। এরপরই ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে খুন হন শিবিরকর্মী কামরুল ইসলাম। মওলানা ভাসানী হলে এক বন্ধুর রুমে উঠেছিলেন তিনি। পকেটে তার শিবিরের ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। শিবির করার অপরাধে ১৯৯৪ সালের ১৭ আগস্ট আট-দশজন সন্ত্রাসী রাতভর পিটিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
শিবিরের অনুপস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ ও বামদের নিয়ন্ত্রণে ধর্ষকদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। ছাত্রলীগের একজনই ধর্ষণ করে ১০০ ছাত্রীকে। আবার ঘটা করে সেই ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতির কাছে অপকর্মের জন্য চিহ্নিত হয়ে যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়-পড়–য়া ছাত্রীরা পড়ে বিপাকে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের কিছু দিন আগে রাজধানীর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে- তারা জোর করে ছাত্রীদেরকে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করত। ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরাই এ খবর ফাঁস করেন। ওই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে বামদের কোনো আপত্তি নেই। এভাবে বামদের আশকারায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়াশোনার বদলে ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তদের অশ্লীলতা, মদ, জুয়ার আস্তানা হয়ে ওঠে ।
গত প্রায় চার দশক ধরে শিবির এক দিকে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পড়াশোনা-বান্ধব পরিবেশ আয়োজনে সহায়ক হয়েছে, একই সময় তারা বামদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হয়েছে। শতাধিক ছাত্রকে শিবির করার কারণে হত্যা করা হয়েছে। মিথ্যা প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছে হাজার হাজার শিবিরকর্মী। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে অনেকের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে। হাসিনা সরকারের সময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রসংগঠন শিবির। তাদের সবধরনের মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। শিবিরকর্মী হলে কারো রেহাই ছিল না। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তাদের অধিকারের প্রশ্ন তোলাও অপরাধ হিসেবে গণ্য ছিল। কারণ তাদেরও সরকারি বাহিনী নিশানা করত। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ যেমন তাদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন চালাত, তেমনই রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে বিচারবহিভর্ূত হত্যা-গুম-খুন করা হতো। বাম ছাত্রসংগঠনগুলো এই শিবিরের বিরুদ্ধে এখন সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ এনেছে। যেখানে বামরা দেশের সবগুলো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের পুরো সময়কালে জামাই আদরে ছিল। বাম সংগঠন করার সুবাদে তারা ছাত্রলীগের সমান মর্যাদা পেত। ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড চালানোর অপরাধে ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশের কোথাও তাদের আর অস্তিত্ব নেই। তাদের সহযোগী বামরা কিন্তু আছে সমাদরে। সংঘটিত একটি অপরাধেরও দায় তাদের নিতে হয়নি; বরং তারা শিবিরকে ক্যাম্পাসের রাজনীতি থেকে উৎখাতের দাবি জানাচ্ছে। এর চেয়ে বড় অবিচার আর কী হতে পারে!
ফ্যাসিবাদী দাবি নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে বামরা
জুলাই বিপ্লব নিয়ে ছাত্রশিবির গত এক বছরে সাড়াজাগানো কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। উদ্ভাবনী ওই সব কর্মসূচি দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারের বাইরে জুলাইকে স্মৃতিতে ধরে রাখার মতো এমন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান অন্য কোনো সংগঠন করতে পারেনি। তারই অংশ হিসেবে টিএসসিতে তারা আয়োজন করে ‘৩৬ জুলাই আমরা থামব না’-শীর্ষক তিন দিনের এক চমকপ্রদ প্রদর্শনী। সেখানে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের ওপর রাষ্ট্রীয় অপরাধের চিত্র তুলে ধরা হয়। এসব রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল সেগুলোর সাথে তাদের ন্যূনতম সম্পর্ক ছিল না। রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে হাসিনা বিচারের নামে তাদের হত্যা করে প্রতিহিংসা মিটিয়েছেন। এদের একজন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েছেন। যুদ্ধের সময় তিনি এসএসসি পাস কিশোর, ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়। যুদ্ধের সময় এই তরুণের সাথে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর কোনো সংযোগ ছিল না। তার অপরাধ ছিল- তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তাই অন্য পাঁচজনের মতো তাকেও হত্যা করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে শিবির শতাব্দীর ভয়াবহ অবিচারের কিছু নথিপত্র প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করতে হলে যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে যে প্রহসন ও অবিচার করা হয়েছে তার প্রতিকার করতেই হবে। এতে হাসিনা এবং এই তথাকথিত বিচার আয়োজনের সাথে জড়িত সবাই অভিযুক্ত হবেন। এ অবিচারের বিচার চাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। বাম সংগঠনগুলো মব তৈরি করে শিবিরের ওই প্রদর্শনী ভণ্ডুল করে দেয়ার ঘৃণ্য চেষ্টা করে। সেখানে তারা ফ্যাসিবাদের পুরনো ‘আমিও জানি তুমিও জানো, সাদিক কায়েম পাকিস্তানি’ স্লোগান দেয়। হাসিনা যেই বাইনারিতে ফেলে দেশকে বিভক্ত করে তার শাসন দীর্ঘায়িত করতে ‘রাজাকার’সহ সেসব নিন্দনীয় স্লোগান প্রচলন করেছিলেন, বামেরা সেগুলো আবার দিতে থাকে। শিবির তাদের প্রতিরোধ করতে যায়নি। ধৈর্যের সাথে তাদের মবকে মোকাবেলা করে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে হাসিনার বিচারিক হত্যার শিকার মজলুম নেতাদের ছবি সরিয়ে নেয়।
এরপরও বামরা থেমে নেই। তাদের দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সম্প্রতি হলে ছাত্রদলের কমিটি দেয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আয়োজিত ভিসির অনুষ্ঠান বয়কট করে তারা। একটি সুনির্দিষ্ট সমস্যার কিভাবে সমাধান করা হবে সে জন্য তাদের ডাকা হয়। সেই সমস্যা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তারা শিবিরকে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয়ার মামার বাড়ির আবদার নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছে। ক্যাম্পাসে গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি থাকলে অসুবিধা নেই, সন্ত্রাস-ধর্ষণেও অসুবিধা নেই; কিন্তু শিবির ক্যাম্পাসে থাকতে পারবে না- এটাই তাদের দাবি। তারা জানাচ্ছে, কোনো একসময় পরিবেশ পরিষদে শিবির অবাঞ্ছিত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির হত্যাকে কেন্দ্র করে। আগেই উল্লেখ করেছি, এ হত্যার জন্য শিবির দায়ী না হলেও তার দায়ে ছাত্রসংগঠনটিকে ক্যাম্পাস থেকে উচ্ছেদ করা হয়। শিবিরকে ষড়যন্ত্রমূলক ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ করার পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার বদলে এখন সেই একই মিথ্যা অভিযোগে আবারো শিবিরকে তারা বঞ্চিত করতে চায়।
কোনো সংগঠনের অধিকারের আওতা নির্ধারণ করে দেয়ার অধিকার পরিবেশ পরিষদের নেই। এটির আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। যদিও পরিবেশ পরিষদকে রাবার স্ট্যাম্প বানিয়ে শিবিরের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ক্যাম্পাসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার বৈধ কর্তৃপক্ষ সিনেট, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।
বামদের পক্ষে মিডিয়ার উসকানি
ক্যাম্পাসে বামদের ডজনখানেক সংগঠনের সব মিলিয়ে শতাধিক নেতাকর্মী সমর্থক রয়েছে। তারপরও এরা অন্যায় অযৌক্তিক দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠ গরম রাখতে পারছে মিডিয়ায় প্রচারণা পাওয়ার কারণে। টিএসসিতে সর্বশেষ মব তৈরির সময় কয়েকটি মিডিয়া অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে সেটি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে। এ নিয়ে মিডিয়া বিপুল অপতথ্য ও ভুল তথ্য দেয়। বিচারিক হত্যার শিকার রাজনীতিকরা রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী- তাদের ছবি প্রদর্শনে ক্যাম্পাস অপবিত্র হয়ে যাচ্ছে, এই রব তোলার চেষ্টা করা হয়। বরাবরের মতো শিবিরের বিরুদ্ধে বানোয়াট খবর করে ডেইলি স্টার ও আজকের কাগজ ধরা খায়। প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই শিবির অনুষ্ঠান করছে মর্মে তারা মিথ্যা খবর দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিবির তার সংশোধনী দেয়।
শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভিসির ডাকা মিটিং থেকে তিনটি বাম সংগঠন বেরিয়ে যায়। প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা এ বিষয়টিকে শিরোনাম করেছে। অথচ সেখানে ২৩টি ছাত্রসংগঠন অংশ নিয়েছিল। আলোচনার বিষয় ছিল, হলে ছাত্ররাজনীতির স্বরূপ কী হবে। আলোচনার মূল বিষয় নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহ নেই। শিবিরকে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে অব্যাহত ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে তারা। বিভিন্ন মেরুতে বিভাজিত বাংলাদেশের মিডিয়া শুধু বামদের প্রতি সমর্থনে এক হয়ে যায়। এই অদ্ভুত প্রবণতা দেশের মিডিয়ার জন্য বদনামের কারণ হয়েছে।
ছাত্রদল কি অতীত ভুলে যাচ্ছে
ফ্যাসিবাদের সময় বেশি নির্যাতনের শিকার ছাত্রসংগঠনের অন্যতম ছাত্রদল। তাদেরকে প্রত্যেকটি ক্যাম্পাস থেকে তাড়ানো হয়েছিল। এরপর শিবিরের মতোই তাদের ওপর নেমে এসেছে বিচারবহির্ভূত হত্যা-গুম ও মামলা। ২০২২ সালে নতুন কমিটি ঘোষণার পর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের মরিয়া চেষ্টা চালায়। নীলক্ষেত থেকে ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় এফ রহমান হলের সামনে আটকে দিয়ে ছাত্রলীগ তাদের বেধড়ক পেটায়। রড-হকিস্টিকের আঘাতে ছাত্রদলের কয়েক ডজন নেতা মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছে। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বা পুলিশ প্রশাসন- কারো কাছেই প্রতিকার পায়নি ছাত্রদল। ছাত্রলীগ তাদের বেদম মেরেছে, এ কথাই কেউ স্বীকার করেনি। ছাত্রলীগ দাবি করেছিল- ছাত্রদলের অন্তঃকোন্দলের কারণে ওই ঘটনা ঘটে। স্বয়ং ভিসি তাদের সাথে প্রতারণামূলক আচরণ করেছেন।
সেদিনও বাম ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রলীগের ডানার নিচে নিরাপদে ছিল। তারা ছাত্রদলের করুণ অবস্থা নিয়ে হাসাহাসি করেছে। একটি বিবৃতিও দেয়নি। জুলাই বিপ্লবের পর বামদের যখন ফ্যাসিবাদের সহযোগী হওয়ার অপরাধের দায় নেয়ার সময়, তখন তারা মনে হয় ছাত্রদলের ছত্রচ্ছায়া পাচ্ছে। সে কারণেই ক্যাম্পাসে শিবিরের প্রদর্শনী নিয়ে ছাত্রদল বামদের লাইনে বিবৃতি দিয়েছে।