নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার শ্রমিকের এ মৃত্যু নাগরিক সমাজের মধ্যে জোরালো প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে প্রাণ দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছিলেন শ্রমিকশ্রেণির মানুষ। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থানের পরও শ্রমিকের প্রাণহানি থামছে না। শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। এটি অবশ্যই উদ্বেগজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এ সংঘর্ষের সূত্রপাত এভারগ্রিন নামের একটি কারখানার ৫১ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে। শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের বেতন-ভাতা না দিয়েই হঠাৎ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থান হারানো ও প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার হতাশা যখন তীব্র হয়, তখন শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক। এ ক্ষোভ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের রূপ নিতে পারত, যদি কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে সংলাপে বসত এবং সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট থাকত। কিন্তু তা না করে হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিতে এসে ইপিজেডের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারায় সড়ক অবরোধ করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন উত্তেজিত শ্রমিকেরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সে সময় গুলিতে ওই শ্রমিক নিহত হন। খবরের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে ছিল সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার বাহিনী ও বেপজার নিরাপত্তা বাহিনী। সংঘর্ষের ফলে এসব বাহিনীর ১৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন।
এভারগ্রিন কারখানার শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে তিন দিন ধরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এ তিন দিনেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারখানামালিক, বেপজা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন কতটা আন্তরিক ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে তারা তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করলে কি শ্রমিকের এই প্রাণহানি দেখতে হতো? নিহত শ্রমিক ছিলেন আরেকটি কারখানার। সেখানে সারা রাত কাজ শেষে তিনি সকালে ইপিজেড থেকে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন।
স্বজনেরা মরদেহ নিয়ে যাওয়ায় নিহত শ্রমিকের সুরতহাল করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করব, এ প্রাণহানির দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত গঠন করা হবে। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। মালিকদের মর্জিমাফিক শ্রমিক ছঁাটাই অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।