ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বালু লুটের মাধ্যমে নদীগুলোর যে সর্বনাশ আমরা দেখেছি, তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। সাধারণত যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের প্রভাবে বালু লুটের ঘটনা ঘটে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এর পুনরাবৃত্তি হওয়াটা হতাশাজনক। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাচারের ঘটনা সেই বাস্তবতা সামনে নিয়ে এসেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, নেতাই নদ থেকে ‘লাল বালু’র চাহিদা বেড়ে গেছে নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর থেকে। ফলে এই নদ এখন একদল বালুখেকোর লোভের শিকার হয়েছে। ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারের রাত জেগে অভিযান সত্ত্বেও বালু লুট থামানো যাচ্ছে না। অভিযান চালালে গাড়ি জব্দ হয় ঠিকই, কিন্তু মূল অপরাধীরা পালিয়ে যান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘নিজেদের প্রশাসনিক কাজের বাইরে প্রতিদিন রাত জেগে আমরা বালু উত্তোলন ও পাচার রোধে কাজ করছি। গত এক মাসে ১০০–এর বেশি গাড়ি জব্দ করা হয়। যাঁরা বালু উত্তোলন চক্রে জড়িত, তাঁদের শনাক্ত করে সবার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া আছে। কিন্তু তাঁরা জেলখানায় নেই, বাইরে ঘুরছেন। আমার কাজ তো মামলা দেওয়া, আসামি ধরা তো আমার কাজ নয়।’ তাঁর এই বক্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট, চক্রটি এতটাই শক্তিশালী যে কেবল প্রশাসনের অভিযান দিয়ে তাদের দমন করা সম্ভব নয়।

বালু উত্তোলন চক্রে স্থানীয় সাধারণ মানুষ এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত, ইউএনও নিজেই তা স্বীকার করেছেন। এখানে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার বিষয়টিও প্রকাশ পায়। বালু লুটের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজশের ঘটনা নতুন নয়। ফলে কেন পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা হোক। যদিও স্থানীয় পুলিশ বলছে, তারা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে।

অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদের গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে, নদের পাড় ভাঙছে এবং জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে পরিবেশ ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ওপর। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। শুধু অভিযান নয়, বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। যাঁরা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয়নির্বিশেষে আইনের আওতায় আনতে হবে। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে। ধোবাউড়ায় স্থানীয় প্রশাসন যে ভূমিকা রাখছে, তা প্রশংসনীয়। আমরা আশা করব, তাঁরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাবেন।

সূত্র, প্রথম আলো