টকশো ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেশকিছু পরিচিত মুখ হঠাৎ উলটো রথে যাত্রা করায় তৈরি হয়েছে রহস্য। চোখ কপালে তুলছেন সাধারণ মানুষ, বিভ্রান্তও হচ্ছেন অনেকে। এসব মুখ গত রেজিমে, এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথমদিকে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বললেও বেশকিছু দিন ধরে তারা বলা যায় আওয়ামী লীগের ব্যাপারে মায়াকান্না করছেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চান এবং সগৌরবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনেও তাদের আপত্তি নেই। তারা অবশ্য কৌশলগত কারণে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের পক্ষে সরাসরি কথা বলেন না, তারা ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান। অর্থাৎ ধীরে ধীরে একটা অনুকূল পরিবেশে শেখ হাসিনা যাতে দেশে ফিরতে পারেন, সেই চেষ্টা করছেন তারা। রং বদলানো ডিগবাজি দেওয়া এসব কথকের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক, আইনজীবী, আমলাসহ সুবিধাভোগী বেশকিছু বুদ্ধিজীবী। টেলিভিশনে কথা বলা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ফ্যাসিবাদের পক্ষে সাফাই গাইছেন তারা। তাদের উদ্দেশ্য, হয় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করা, না হয় দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন বানচাল করা।
এটা এক বড় প্যারাডক্স যে, গত ফাসিবাদী রেজিমে যারা শাসক শ্রেণির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নানারকম ঝুঁকি নিয়ে সাহসী বক্তব্য দিয়েছিলেন, নানারকম কন্টেন্ট বানিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিলেন, তাদের অনেকে এখন এমনভাবে কথা বলছেন যেন ১৫ বছরসহ গত বছরের জুলাই-আগস্টে কিছুই ঘটেনি। এরা কোনো মহল থেকে আর্থিক সুবিধা পেয়ে এমনটা করছেন কি না, খতিয়ে দেখা দরকার। তবে এটা অনুমান করা কঠিন নয়, পালিয়ে থাকা পতিত স্বৈরাচারের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা হয়তো এক মরীচিকার পেছনে ছুটছেন, যদি কোনোভাবে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হতে পারে, তাদের স্বপ্নপূরণ হবে। অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, এদেশের সুশীল সমাজের একটা বড় অংশের কাছে দেশের স্বার্থ বলে কিছু নেই, তারা নিজের স্বার্থেই তাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করেন। নিরপেক্ষতা বলতে কোনো শব্দ তাদের অভিধানে নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব কাজই ভালো, এমন কোনো কথা নেই। ফলে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু তা না করে এসব তথাকথিত সুশীল জনগণকে এই সরকারের বিকল্প হিসাবে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। অবশ্য আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের চোখ-কান খোলা রয়েছে, পার্থক্যটা তারা ধরতে পারেন ঠিকই। দেশবাসী অপযুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে যুক্তির পথে হাঁটবেন, এমন প্রত্যাশা থাকবে আমাদের।