আন্তর্জাতিক এসএমএস খাত থেকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বৃহস্পতিবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) চালুর পর থেকেই আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবা আইজিডব্লিউর আওতার বাইরে রেখে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের (এমএনও) হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অথচ লাইসেন্সিং গাইডলাইনস ও আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ সেবা নীতিমালা অনুসারে ইন্টারনেট ছাড়া সব আন্তর্জাতিক সেবা আইজিডব্লিউর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কথা। পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রশাসনিক নির্দেশনা বহাল থাকায় সরকার এখনো বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের এক বছর পার হলেও রহস্যজনক কারণে জয়ের সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
প্রতিবেদনটি থেকে স্পষ্ট যে, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিগত সরকারের প্রভাবশালী ওই ব্যক্তির নির্দেশের ফলে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এ বিষয়ে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবাটি আইজিডব্লিউর আওতার বাইরে কেন রাখা হয়েছে এবং তা মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি, এ বিষয়টিও তদন্তের দাবি রাখে। কারণ এটি শুধু নীতিমালার লঙ্ঘনই নয়, এর ফলে রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি মানি লন্ডারিং ও জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে বলে মনে করি আমরা।
বলা বাহুল্য, আন্তর্জাতিক ইনকামিং এসএমএস থেকে সরকার বর্তমানে যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, যদি সেবাটি আইজিডব্লিউর মাধ্যমে পরিচালিত হতো, তাহলে আয় প্রায় আটগুণ বেড়ে যেত। আইজিডব্লিউ অপারেটরদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এই ব্যবসা বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকারের উচিত অবিলম্বে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা। জুলাই-পরবর্তী সময়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরও কেন এই সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে, তা একটি বড় প্রশ্ন বটে। কারণ, আইএলডিটিএস নীতিমালা মেনে আন্তর্জাতিক এসএমএস সেবা পরিচালনার জন্য আইজিডব্লিউ অপারেটরদের অনুমতি দেওয়া হলে শুধু সরকারের রাজস্বই বাড়বে না, বরং এ খাতের শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে মানি লন্ডারিং এবং জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকিও কমানো সম্ভব হবে। একটি নতুন ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার এই জটিল সমস্যাটির সমাধান করবে এবং একইসঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকার দেশীয় বিনিয়োগকে সুরক্ষা দেবে, এটাই প্রত্যাশা।