এখন প্রত্যেক ঘরেই সেনাবাহিনীর সদস্য আছেন। সুতরাং সেনাবাহিনী দেশের আলাদা কিছু নয়। বরং বেসামরিক বাহিনীর সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হলো আমরা তাদের তুলনায় কম বয়সে অবসরে যাই।

কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আবদুল হক, পিএসসি, রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) কার্যনির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান। ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের ইরাক-কুয়েত শান্তি মিশনে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬-০৭ সালে আফ্রিকার লাইবেরিয়ায় জাতিসংঘের শান্তি মিশনেও কনটিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অতীত ও বর্তমান অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিকা মাহজাবিন

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন। তারা রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন কি?

এখন প্রত্যেক ঘরেই সেনাবাহিনীর সদস্য আছেন। সুতরাং সেনাবাহিনী দেশের আলাদা কিছু নয়। বরং বেসামরিক বাহিনীর সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হলো আমরা তাদের তুলনায় কম বয়সে অবসরে যাই। বেসামরিক কর্মকর্তারা ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যান। আর যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তার কারণে সামরিক বাহিনীর শারীরিক সামর্থ্য যতদিন থাকে, তার পরই তারা অবসরে যান। ধরা যাক, একজন সৈনিক ৩৫-৪০ বছরে অবসরে যান। একজন মেজর ৪০-৪৫ বছরে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ৫০ বছরে অবসরে যান।

এত কম বয়সে অবসরে গিয়ে তারা বসে সময় কাটাবেন না। তাদের দক্ষতা প্রমাণিত। এই মেধাবী ও কর্মঠ ব্যক্তিদের কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র কিছু অর্জন করার ব্যবস্থা করেনি। অর্থাৎ আমরা ঘরের মূল্যবান জিনিসকে ব্যবহার না করে শোকেসে রেখে দিয়েছি। ঠিক একইভাবে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সরকার ভালো কাজে ব্যবহার করছে না। সেজন্য রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আমরা একত্র করছি। বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনামলে আমরা এমনভাবে কাজ করতে পারিনি। বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশে আমরা চাচ্ছি, আমাদের এ হাজার হাজার লোকের মেধা ও যোগ্যতাকে দেশের স্বার্থে কাজে লাগানোর। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ অনেকগুলো পন্থা রয়েছে। রাজনীতি এরই একটি অংশ। বর্তমানে যোগ্য রাজনীতিবিদদের অভাব রয়েছে। বড় দুই-একটি দল বাদে অন্যরা মিথ্যা বলা, প্রতারণা, দুর্নীতিসহ নানা খারাপ কাজে জড়িত ছিল।

এক-এগারোর পরে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা প্রত্যেকটি মামলা সঠিক ছিল। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এটি ছাড়া সে সময় দুদকের আওয়ামী, বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলাগুলো সঠিক ছিল। নয়তো তারা অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হলেন কীভাবে!

তবে বাইরের জগতের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সংযোগ কম থাকায় তারা সৎ থাকেন। এখন যদি প্রশ্ন করেন শেখ হাসিনার সময় তাদের কী ভূমিকা? এটা উদাহরণ হতে পারে না। শেখ হাসিনা তার নিজের স্বার্থে জোর করে কিছু কিছু কর্মকর্তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছিল। একজনকে দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়া হলে সে যদি আমার অধীনে থাকে তাহলে আমি যা বলি সে তাই করবে। তাকে চাকরের মতো ব্যবহার করার এটা সহজ উপায়। শেখ হাসিনার শাসনের নামই ফ্যাসিবাদ। তাই এটার তুলনা হতে পারে না। কিন্তু তার পরও সব কর্মকর্তা নষ্ট হননি। হয়তো হাজারে এক-দুইজন নষ্ট হয়েছেন। বাকি কর্মকর্তা ও সৈনিকরা কেউ যদি রাজনীতিতে নামতে চান সেটি দেশের জন্য ভালো।

সেনাবাহিনীর সদস্যদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার চিত্রটি কেমন?

এ সংখ্যাটি তেমন বেশি নয়। তবে সবাই রাজনীতি নিয়ে সচেতন। অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।

বিগত তিনটি নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রধানদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী কেমন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন?

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কোনোভাবেই দলীয় হবে না। এটি শতভাগ নিশ্চিত। কারো পকেটের হয়ে সেনাবাহিনী হিসেবে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি জানি বর্তমান সেনাপ্রধান অন্তত সেটা করবেন না। কাউকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার দায়িত্ব সেনাবাহিনী আর নেবে না। এমনকি সেনাপ্রধান বললেও সেনাবাহিনী যাবে না, তার কথা অমান্য করবে। এমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেন যে ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এ সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্ভব না হলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে পারে?

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কথাটাই তিনি বলেছেন। তিনি নির্দেশ দিতে পারেন না। ড. ইউনূসের মতো তিনিও দ্রুত নির্বাচন চান। যত দ্রুত নির্বাচন দেয়া হবে সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে।

নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জেনারেল এরশাদের পতনের পর দীর্ঘ দেড় দশকের ওপরে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। এর কারণ কী?

এর উত্তরে আমাকে ইতিহাসে ফেরত যেতে হবে। জেনারেল জিয়াউর রহমান কিন্তু সেনাবাহিনীতে থেকে দল গঠন না করলে আমাদের দেশের জন্য বিপদ হতো। ওই সময়ে আমাদের ফেরত যেতে হবে। সে সময় শুধু বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) ব্যতীত অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। তিনি নিজে থেকে আসেননি; সবাই মিলে তাকে টেনে সামনে নিয়ে আসেন দেশ পরিচালনার জন্য। রাজনৈতিক শূন্যতাকে পূরণ করার জন্য তিনি দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় একমাত্র তিনিই ছিলেন। বাকিরা অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগ ভুল তথ্য দিয়েছে। তিনি কিন্তু সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেননি। তিনি অত্যন্ত দেশপ্রেমিক ছিলেন। হ্যাঁ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিষয়টা ভিন্ন। খুব সম্ভবত প্রতিবেশী দেশ ভারতের নির্দেশে তিনি কাজটি করেছেন। কেননা বিএনপি খুব জনপ্রিয় একটি দল ছিল। এ দলটির মাধ্যমে তখন রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থাকায় ভারত সহজে কিছু করতে পারছিল না। যেহেতু নির্বাচিত সরকার ছিল। এছাড়া ভারতের কাছে এরশাদের অনেক ট্রাম্প কার্ড ছিল। সেজন্য দেশটি যা বলেছে, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেজন্য ক্যু করে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে এটি আমার ধারণা।

তবে এরশাদ রাজনীতিকে নষ্ট করেছিলেন। রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বানিয়ে ফেলেছিলেন। দ্বিতীয়ত, নিঃসন্দেহে অনেক সামরিক কর্মকর্তা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে মানুষ নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। এসবের পাশাপাশি সে সময় অনেক উন্নতিও হয়েছে। কিন্তু এটি কোনো বৈধ সরকার ছিল না। যদিও রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি করে একটি কালার দেয়া হয়। এখনকার এ সময়টা ব্যতিক্রম। এরপর দীর্ঘ সময় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ায় রাজনীতিতে যুক্ত হয়নি। তবে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা ছিল না।

ওই সময় রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়ার পেছনে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করেছে। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে আমাদের কর্মকর্তাদের যাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি মহীরুহে পরিণত হয়। প্রত্যেক কর্মকর্তা মিশনে যাওয়ায় তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলো। ১৯৯৩ সালে আমি কুয়েত মিশনে গিয়েছিলাম। সে সময় মেজর হিসেবে বার্ষিকভাবে আমি ২ হাজার ২০০ ডলার বেতন পেয়েছিলাম। অথচ বাংলাদেশে আমার বেতন ৪-৫ হাজারের অধিক হবে না। এতে প্রত্যেকের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়েছে। মূলত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেতন স্কেল বাড়ানো, ভাতা প্রদানসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের অনেক সুযোগ দেয়া শুরু করলেন, যা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাজনীতিবিমুখ করে ফেলে। সামরিক বাহিনী থেকে এখনো তুলনামূলকভাবে কমসংখ্যক কর্মকর্তা রাজনীতিতে আসছেন। আমি মনে করি আরো বেশি করে আসা উচিত।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনৈতিকীকরণের চিত্রটি কেমন?

একটি মিথ চালু করা হয়েছে যে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দুর্নীতিবাজ। মূলত পুরো প্রশাসনে দুর্নীতিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিচালনা করে সচিবালয়। এছাড়া ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসক রয়েছেন। উপজেলাগুলোয় রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সেখান থেকে শুরু করে সচিবালয় পর্যন্ত ৯০ শতাংশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত এবং তারা দেশকে শেষ করেছে। তবে দুর্নীতিতে যেসব কর্মকর্তা জড়িয়েছেন তারা কেউ সেনাবাহিনীর নন। নৌ কিংবা বিমান বাহিনীরও কেউ নন। বরং এসব বাহিনী থেকে যাদের প্রেষণে পাঠানো হয়েছে তারাই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) সেনাবাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের নিয়ন্ত্রণাধীনও নন। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর অধীনে এবং তিনি নিজেই এটি নিয়ন্ত্রণ করেন। একইভাবে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক, ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (এনএসআই) মহাপরিচালক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালকও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে। এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক কর্মকর্তা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছেন, দুঃশাসন চালিয়েছেন।

কিন্তু তারা তো সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ সময় ছিলেন।

কোনো একজন লোক যখন ঘরের বাইরে চলে যান তখন তার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রশাসন ট্র্যাপে ফেলে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তাদের দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করিয়েছে। ধরা যাক—র‍্যাবের কর্মকর্তাদের কাঠামো মূলত পিরামিডের মতো। যে কয়জন কর্মকর্তাকে র‍্যাবে পদায়ন করা হয়েছে তারা মেজরের ঊর্ধ্বে যাওয়ার কথা নয়। সেখানে কোনো কর্মকর্তা দিয়ে মানুষ খুনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করানো হলো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকায় অঢেল ধনসম্পত্তি রয়েছে এমন একজন লোককে গুম করাল ও খুন করাল ওই কর্মকর্তাকে দিয়ে। সেই কর্মকর্তাকে তারিক সিদ্দিক মেজর পদ থেকে পদন্নোতি দিয়ে লে. কর্নেল বানিয়ে দিয়ে দিল। এটি সেনাবাহিনীর জুরিসডিকশনে হয়নি। বরং প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সেগুলো বাগিয়ে নেয়া হতো। প্রভাব খাটিয়ে সবাই পদোন্নতি পেত না। এটি হাতেগোনা কয়েকজন। কিন্তু পুরো দোষ দেয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীকে, যা এ দেশের জন্য দুর্ভাগ্য। এর জন্য হাজার হাজার আমলা আড়ালে পড়ে গেল। একেকজন আমলা, রাজনীতিবিদ ও পুলিশের দুর্নীতি বহুগুণে বেশি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী তাদের কাছে শিশু।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সেনাবাহিনীর এ দায়িত্ব পালনকে কীভাবে দেখেন?

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নামমাত্র। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে থাকছেন। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানেন না কাকে ধরতে হবে। এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে মূলত তারা যেন অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারে। পুলিশের সহায়তা ছাড়া গ্রেফতার করা সম্ভব নয়। সুতরাং এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ওই ম্যাজিস্ট্রেটদের মতো নয়। শুধু গ্রেফতারের জন্য এ ক্ষমতা।

অনেক দিন ধরে এভাবে ব্যারাকের বাইরে সেনাবাহিনীর থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এখন যদি সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয় তাহলে দেশে অরাজকতা তৈরি হবে। এখন পুলিশ দুর্বল। সেনাবাহিনী মাঠে আছে বলেই ঈদে বড় ধরনের কিছু ঘটেনি। সেনাপ্রধান বলছেন যে দ্রুত নির্বাচন দেন আমরা ব্যারাকে ফিরে যাব।

সেনাবাহিনীর সংস্কারের কথা শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে আবেদনও জমা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন?

সারা বিশ্বেই সেনাবাহিনীর কাঠামো একই; পেশাদারিত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। সুতরাং সেনাবাহিনীতে সংস্কারের প্রয়োজন নেই। বরং রাজনীতিবিদদের সংস্কার করতে হবে, যাতে তারা সেনাবাহিনীতে হস্তক্ষেপ না করেন। রাজনীতিবিদরা হস্তক্ষেপ না করলেই সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারিত্ব বজায় থাকবে।

‘জনতার দল’ গঠনকে কীভাবে দেখেন?

কিছু দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা দেখলেন যে রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটেই ‘‌জনতার দল’র যাত্রা শুরু হয়েছে। ব্রি. জে. (অব.) মো. শামীম কামাল এটি শুরু করেছেন। খুব ভালো। তার সঙ্গে আরো যারা আছেন তারা সবাই সৎ কর্মকর্তা। আমি এটিকে স্বাগত জানাই। এখন দেশের জনগণ কতটুকু গ্রহণ করে সেটি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

বিডিআর বিদ্রোহের নামে হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ কমিশনের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট?

বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের জন্য কমিশন গঠিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত যতদূর কাজ এগিয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। তবে একটি চ্যালেঞ্জ হলো এখন আন্তর্জাতিক হুলিয়া জারি করতে হবে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে বিচার হবে।

সূত্র, বণিক বার্তা