ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের অঙ্গীকার করে ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ মঙ্গলবার জাতির সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এদিন রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অর্জিত গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসাবে এই বহুল প্রত্যাশিত ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সংবিধানের তফশিলে সন্নিবেশিত করবে। এছাড়া ২৮ দফার ঘোষণাপত্রে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। রয়েছে আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও।
এ ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বিএনপি এ ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণা বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। দেশের বৃহত্তর দলটির বিশ্বাস, এই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে, তা পালনের মধ্য দিয়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রূপান্তরের কাজ শুরু হবে। সুযোগ সৃষ্টি হবে একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের প্রগতিশীল সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ প্রক্রিয়ার। এদিকে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ হতাশা ব্যক্ত করে এর অস্পষ্টতা দূরীকরণে ঘোষণাপত্রে বেশকিছু জনআকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয় যুক্ত করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। অপরদিকে, ঘোষণাপত্র অনুযায়ী গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসতে সঠিক সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে জুলাই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হলো। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথ সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করি আমরা। তবে এই ঘোষণাপত্রের আইনগত ভিত্তির বিষয়টিও মাথায় রাখা দরকার। অন্যথায়, ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। কারণ, বর্তমান সরকার ‘নির্বাচিত’ না হওয়ার কারণে ত্রয়োদশ নির্বাচনের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদের বিরোধিতার মুখে ঘোষণাপত্রটি বদলানোর সুযোগ থাকবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত অঙ্গীকার পালনের মধ্য দিয়ে সব পক্ষ নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা।