‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা’-সলিল চৌধুরীর লেখা ও সুর দেওয়া বিখ্যাত এই দেশাত্মবোধক গানের কথাই আজ জাতির সামনে যেন অতি বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার এই কারিগরকে গ্রেফতারে প্রায় এক বছর বিলম্ব হওয়ায় জনমনে অনেক প্রশ্ন ও ক্ষোভ ছিল। অবশেষে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া এই বিপথগামী বিচারককে গ্রেফতার করায় জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এ ঘটনায় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সরকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি খায়রুল হককে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় সাবেক এই প্রধান বিচারপতিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্লাহ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, এই প্রথম দেশের সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতিকে কারাগারে যেতে হলো। সন্দেহ নেই, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে এই গ্রেফতার জাতির ইতিহাসে বড় সাফল্যের অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হবে। একই সঙ্গে এ গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল, অন্যায় করে, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কেউ কোনোদিন রেহাই পায় না। যদিও দেশের বিচার অঙ্গনের জন্য ঘটনাটি সুখকর ও সম্মানজনক নয়, তবুও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কেউই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এই বার্তাটি পরিষ্কার হওয়া খুবই প্রয়োজন ছিল। পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন ছিল, শোষকের পক্ষে এবং জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে কোনো বিচারপতিও শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারেন না।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জনগণের শেষ ভরসাস্থল উচ্চ আদালতও দলবাজিতে যুক্ত হয়ে পড়ে, যা ছিল জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, স্বয়ং প্রধান বিচারপতিসহ অনেক বিচারপতি একটি স্বৈরাচারী রেজিমকে টিকিয়ে রাখতে যা যা খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যায়, তার সবই করেছিলেন। এমনকি ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি বিচার অঙ্গনকে চরমভাবে বিতর্কিত করে এমনও বলেছিলেন, ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ।’
জানা গেছে, বিচারপতি খায়রুল হকের নামে খুন, দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে এখন পর্যন্ত চারটি মামলা রয়েছে। এর বাইরে আর কোনো অভিযোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিচারাঙ্গন কলুষিত করে শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট শাসক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি নানা ক্ষেত্রে যেসব অপকর্মের বীজ বপন করেছেন, তাতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা এসব মামলা যথেষ্ট কিনা, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আওয়ামী লীগের একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জনক হিসাবে আখ্যায়িত এই সাবেক প্রধান বিচারপতি দীর্ঘদিন আইন ও রীতি লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে নানা সুবিধা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই গুরু পাপে তার বিরুদ্ধে যেন লঘু মামলা না হয়, সংশ্লিষ্টদের সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।