রাজধানীর মাঠ ও পার্কগুলো সরকারি সম্পত্তি। এগুলোর ওপর অধিকার নাগরিকের। হাঁটাচলা, খেলাধুলা, নির্মল নিশ্বাস নেওয়া থেকে শুরু করে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য এই উন্মুক্ত স্থানগুলো অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সরকারি সম্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার বেশির ভাগ মাঠ ও পার্ক প্রভাবশালী মহলের দখলে চলে গেছে। উচ্চ আদালতের একাধিক নির্দেশনা এবং চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পরও এ পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আসেনি।

মাঠ, পার্ক ও জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদীরা এ বিষয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শেখ জামাল, শেখ কামালের নামে কিংবা অন্য যে নামেই হোক না কেন, অনেক মাঠ এখন প্রভাবশালী ক্লাবের দখলে। তারা এসব স্থানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে, অথচ সাধারণ জনগণ প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত।

ধানমন্ডি থেকে গুলশান, তেঁতুলতলা—সব জায়গার চিত্র প্রায় একই। গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানও ইয়ুথ ক্লাবের বাণিজ্যিক টার্ফ মাঠে পরিণত হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সীমিত। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাজউক এই ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি পুনর্বহাল করে আদালতের অবমাননা করেছে। এটি কেবল উদাসীনতা নয়, বরং দখলদারদের সঙ্গে সরকারি সংস্থার অনৈতিক যোগসাজশের ইঙ্গিত দেয়।

এই দখলদারির সংস্কৃতি নাগরিক জীবনকে বিষিয়ে তুলছে। শিশুরা খেলার জায়গা পাচ্ছে না, বয়স্করা হাঁটার সুযোগ হারাচ্ছেন। এর কারণে শহরগুলো কেবল কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশবাদীদের বক্তব্য, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হচ্ছে না। জনগণের আন্দোলনের ফলস্বরূপ পরিবর্তন এলেও মাঠ ও পার্কের দখলদারির ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। এর কারণ, দখলদারেরা শক্তিশালী এবং রাজনৈতিক মহলের ছত্রচ্ছায়ায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অবিলম্বে মাঠ ও পার্কের অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক বা আর্থিক প্রভাবশালীর চাপের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না। মাঠ ও পার্ক রক্ষা এবং সেগুলোর উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে আইন কঠোর করতে হবে, যাতে দখলদারেরা কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হয়। রাজউক, সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাদের মধ্যকার অনৈতিক যোগসাজশ ভেঙে দিয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ ও পার্কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক কমিটি গঠন করে সেগুলোর দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।

সূত্র, প্রথম আলো