একুশ বছর বয়সি আমির শেখ, পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা। পেটের দায়ে মাসতিনেক আগে রাজস্থানে গিয়েছিল রাস্তার তৈরি কাজের শ্রমিক হয়ে। মাসখানেক সেখানে কাজ করার পর রাজস্থান পুলিশ তাকে আটক করে। ‘বাঙালি’ পরিচয় দেওয়ার পরই তাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে থানায় নিয়ে যায়। ভারতের নাগরিক প্রমাণের জন্য আধার কার্ড, জন্মসনদ দেখিয়েও লাভ হয়নি। চারদিন থানায় রাখার পর দু’মাসের জন্য আমিরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার এ আটকের কোনো খবরই পুলিশ পরিবারকে জানায়নি। তারপর বিএসএফের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। বিএসএফ অন্যদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে আমিরকে নিয়ে যায়; তারপর বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত দিয়ে পুশইন করে। আমির শেখের পিতা জিয়েম শেখের অভিযোগ-বর্ডারে পুশইন করার সময় সে ভারতীয় নাগরিক বলে গলার স্বর উঁচু করে প্রতিবাদ করায় তার ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করে বিএসএফ। তারপর গলায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলেছে, ‘বাংলাদেশ জায়গা নাহি তো গোলি কার দেয়গা।’ জিয়েম শেখের প্রশ্ন, ভারতের নাগরিক হয়েও যদি আমাদের এ রকম অত্যাচার সহ্য করতে হয়, তাহলে কোথায় যাব আমরা? কোন দেশে আছি আমরা? বাংলায় কথা বলাটাই কি অপরাধ আমাদের? জিয়েম শেখ কলকাতা হাইকোর্টে হিবিয়াস কর্পাস পিটিশন দাখিল করার পর যে শুনানি হয়, সে শুনানি শেষে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ কথাগুলো বলেছেন। হিবিয়াস কর্পাস পিটিশন হলো কোনো ব্যক্তির খোঁজ না পেলে তাকে সশরীরে আদালতে হাজির করানোর দাবি জানিয়ে আবেদন। জিয়েম শেখ হিবিয়াস কর্পাস পিটিশন করার পরই ভারত সরকার নড়েচড়ে বসে এবং আমিরকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ১৩ আগস্ট আমিরকে ভারতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
উপরে যে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হলো, এটি শুধু আমির শেখের একার ঘটনা নয়। কয়েক মাস ধরেই নরেন্দ্র মোদির সরকার ভারতব্যাপী বাংলাভাষাভাষী নাগরিকদের সঙ্গে, বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম নাগরিক হলে তো কথাই নেই এমন অমানবিক আচরণ করছে। বাঙালি মুসলিমদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া, বাস্তুচ্যুত করা, জেলে পুরে দেওয়া কিংবা ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া যেন নিত্যনতুন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতেই এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। অনেক আগেই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হলেও কট্টর হিন্দুত্ববাদী শাসকদল ইদানীং মুসলিম ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরেও বাংলাভাষী মাত্রই বাঙালিদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ শুরু করেছে। ভারতে এ বাঙালি বিদ্বেষের প্রথম বীজবপন হয় আসামে। ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই সেখানে বাঙালি মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত করার ঘটনা শুরু। আসামে বাঙালি নিধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। কুখ্যাত শিলাপাথর হত্যাকাণ্ড এর মধ্যে অন্যতম উদাহরণ। দেশভাগের সময় তৎকালীন পূর্ববাংলা থেকে শরণার্থী হয়ে যেসব বাঙালি আসামে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের হত্যা করাই ছিল দুর্বৃত্তদের মূল লক্ষ্য। ১৯৮৩ সালে তির-ধনুক, তলোয়ার-বর্শা ও বন্দুক নিয়ে অসমীয়রা আসামের অবিভক্ত লক্ষ্মীপুর জেলার শিলাপাথর এলাকায় আশ্রয়গ্রহণকারী বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সহস্রাধিক মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল।
২০১৮ সালে আসামজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি করা হলে ধর্মীয় বিবেচনা ছাড়াই বাঙালি বিতাড়নের আশঙ্কা আরও জোরদার হয়। এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লাখ বাঙালির নাম বাদ দেওয়া হয়। এ ১৯ লাখের মধ্যে ১১ লাখের বেশি বাঙালি হিন্দুর নাম বাদ পড়ে যায়। আসাম থেকে বাঙালি বিতাড়নের ঘটনা যে কত মর্মান্তিক, একটি ছোট ঘটনার অবতারণা করলে উপলব্ধি করা যাবে। পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলার বাসিন্দা সতীশ ঘোষের মেয়ে আরতি দেবীর বিয়ে হয় আসামের বরপেটায়। তার স্বামী অসমীয়া হলেও এনআরসি তালিকা করার সময় পরপর দুবার আবেদন করলেও তা নাকচ করে দিয়ে এনআরসির তালিকা থেকে আরতির নাম বাদ দেওয়া হয়। তারপর সেই যে স্বামীর ঘর ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যেতে হলো আরতিকে, আসামে আর ফিরতে পারেননি। মাঝেমধ্যে আসামে গেলেও বেশিদিন থাকার অনুমোদন নেই তার। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণা বাঙালিদের ভেতর আরও আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আসামের কোনো বাসিন্দা জনগণের নথিতে মাতৃভাষা বাংলা লিখলে বোঝা যাবে রাজ্যে কতজন বিদেশি (বাংলাদেশি) বসবাস করছে।’ আরতি দেবীও কম আতঙ্কিত নন। আরতি দেবী আফসোস করে বলেন, ‘বাংলাভাষায় কথা বলাই কি কাল হলো? আমি আদৌ কি আর কোনোদিন স্বামীর ঘরে ফিরতে পারব না! প্রতিবেশী রাজ্যে বিয়ে করা কি তাহলে অপরাধ?’ আরতির এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই! আরতি দেবী অবশ্য একা নন। আসামে অনেক বাঙালি নারীর ভাগ্যেও এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। ভারতে বাঙালিবিদ্বেষ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, মুম্বাই, আসাম, দিল্লিসহ বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যে বাংলাভাষায় কথা বললেই নেমে আসছে অমানবিক অত্যাচার।
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে গিয়ে বিজেপি মুসলমান নিধন দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে এর পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিজেপি নিত্যনতুন ইস্যু নিয়ে হাজির হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের আশায় বিজেপি সর্বশেষ যে ইস্যুটি সামনে এনেছে, তা হলো বাঙালি মুসলিম মানেই বাংলাদেশি নাগরিক; এ তকমা লাগিয়ে দেশছাড়া করে হিন্দু নাগরিকদের ভোট টানা। তাতে পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলা ভাষাভাষী বাঙালিদের ভেতর উলটো ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিজেপির এ সর্বনাশা পদক্ষেপ বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে এর ছাপ পড়বে, সন্দেহ নেই। মুসলিম নিধনে হাতরাঙা করে নরেন্দ্র মোদি দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমনিতেই অনেক বদনাম কুড়িয়েছেন। ২০১৪ সালে মোদির নেতৃত্বে বিজেপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত তার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরিচয় মুছে দিয়ে ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাপীড়িত দেশে পরিণত হয়েছে। মোদি সরকারের অধীনে মুসলিমরা চরম অবহেলিত, অত্যাচারিত ও বৈষ্যমের শিকার হচ্ছে। মুসলিমদের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে ভারত সরকার এক ধরনের হাত গুটিয়েই বসে আছে। মুসলিমদের ওপর বিজেপিশাসিত রাজ্য সরকারগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার চিত্রই তার প্রমাণ দেয়।
ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর অমানবিক নির্যাতন এখন যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালেই মুসলিম নিধনের যে মিশন শুরু করেছিলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সেই ধারা তিনি বজায় রেখেছেন। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, মোদি সরকার খুব পরিকল্পিতভাবেই সে দেশের মানুষের মনে মুসলিমবিদ্বেষী বীজবপন করতে সক্ষম হয়েছেন। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, একের পর এক মানবতাবিরোধী অপরাধ করেও ভারতকে কারও কাছেই জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে উজবেকিস্তানে ব্রিটিশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রদূত ক্রেইগ মারীর একটি বক্তব্য খুবই উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়েছে। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, সম্প্রতি তিনি ভারত সফরে গিয়ে মুসলিম নিধনের যে চিত্র দেখেছেন, তাতে তার মনে হয়েছে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলকে তোয়াক্কা না করে গাজায় একতরফা গণহত্যা চালিয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কীভাবে পরিত্রাণ পেয়ে যাচ্ছেন, নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি তা আগ্রহ ভরেই লক্ষ করছে। তার আশঙ্কা ‘গাজার পর মোদির নেতৃত্বেই ভারতে মুসলিম গণহত্যার আরও একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।’ কেউ চাইলেই নেট দুনিয়ায় ক্রেইগ মারীর এ বক্তব্য শুনতে ও দেখতে পারেন। নরেন্দ্র মোদি রাষ্ট্রযন্ত্রকে পূর্ণ ব্যবহার করেই এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছেন। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে দেশের আইন-আদালতও এসব ঘটনায় সহায়কের ভূমিকা পালন করছে। শুধু সংখ্যালঘু মুসলমান নয়, একই জ্ঞাতিগোষ্ঠী, একই ধর্মবিশ্বাসী নিম্নবর্ণ হিন্দুদের সঙ্গেও যে আচরণ করা হচ্ছে, তাতে ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার লেবাস খসে পড়েছে। যে দেশে একই ধর্মে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মন্দিরে প্রবেশ করা নিষেধ, সে দেশে অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের প্রতি হিন্দুদের কতটুকু সহানুভূতি থাকতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
২ মে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের প্রধানদের, রাজ্য পুলিশ এবং বিএসএফকে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর একটি সার্কুলার জারি করে। এরপর থেকেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে শত শত বাংলাভাষী শ্রমিক; যার বেশিরভাগ মুসলিম, বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানোর পর জানা গেছে, তাদের অধিকাংশই ভারতীয়, পরে তাদের ফেরতও নেওয়া হয়েছে। বাংলাভাষীদের ওপর লাগাতার নির্যাতন ও প্রতিবাদ চলাকালেই বাংলাভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’বলে উল্লেখ করে চিঠি লিখে দিল্লি পুলিশ পরিস্থিতি আরও ঘোলা করে ফেলেছে। দিল্লি পুলিশের এ অর্বাচীন কাজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আরও বেশি জট পাকিয়েছেন বিজেপির আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অমিত মালব্য। তিনি এক পোস্টে লেখেন, “দিল্লি পুলিশ ‘বাংলাদেশি ভাষা’বলতে বোঝাতে চেয়েছে এমন এক ধরনের ভাষার রূপ, যার উপভাষা, ব্যাকরণ এবং উচ্চারণগত বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষা থেকে আলাদা। বাংলাভাষা বলে এমন কোনো একক ভাষা নেই, যা এসব ভিন্নতা ঢেকে দিতে পারে।” অমিত মানব্যের এ মন্তব্য যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। তার এ মন্তব্যকে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংসের হুমকি বিবেচনা করে বাঙালিরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ইতঃপূর্বে হিন্দি বলতে না পারা অথবা হিন্দি বলতে অস্বীকার করা নিয়ে খোদ কলকাতায় অন্য ভাষাভাষী মানুষের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা ক্ষেপে ছিল। এর সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে দিল্লি পুলিশ ও অমিত মানব্যের কটু মন্তব্য। ভারতের মাটিতে বাঙালি আজ আক্রান্ত। সেখানকার বাঙালিদের উপলব্ধি; ‘বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, এমনকি বাঙালি পরিচয়ও হুমকির মুখে। বাঙালি কি তার নিজ দেশে বাঙালি হিসাবে থাকতে পারবে না? ভারতে থাকতে গেলে হিন্দি জানতেই হবে-এমন জোরজবরদস্তি আর কিছুতেই সহ্য করা হবে না।’
১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাভাষা নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীও বেশি বাড়াবাড়ি করেছিল, যার পরিণতি পাকিস্তানের জন্য ভালো হয়নি। বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যে কোনো অশুভ প্রচেষ্টাকে বাঙালি কখনো মেনে নেয়নি। বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৫২ সালে ঢাকায় এবং ১৯৬১ সালে আসামের শিলচরে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিতেও বাঙালি পিছু হটেনি। ওই একই সূত্রে, বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা আজ যেভাবে জেগে উঠেছে, তারপরও যদি ভারতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর বোধোদয় না হয়, তাহলে তার পরিণতিও যে ভালো হবে না, তা বলাই বাহুল্য।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কলাম লেখক