রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের পরিচয়- একজন মানুষ, করদাতা, ভোটার ও অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, নাগরিকত্বের ভিত্তিতে সমভাবে বিতরণযোগ্য হওয়া উচিত। যেকোনো উপাসনালয়ের ওপর হামলা ঘটলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটিকে আগে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখা। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র যদি আচরণ করে, তবে সমানাধিকার ও অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বাংলাদেশ বহু ধর্মের মানুষ নিয়ে গঠিত। এখানে ধর্মীয় বৈচিত্র্য রক্ষা শুধু ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ থেকে সকল ধর্মাবলম্বীর মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে এটাই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায্যতম কর্তব্য।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান লিখেছেন, ‘ভাষা যদি একটি ফুল হয়, ধর্ম আরেকটি ফুল। ভাষা-ধর্মের কোনো ফুলকে অস্বীকার করব না, কিন্তু ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি, ভাষা বিদ্রোহ এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের বিভিন্ন ফুল নিয়ে যে তোড়া বেঁধেছিÑ এতে সব ফুল আছেÑ এটিই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে এর কোনো বিরোধ নেই; কিন্তু এটি শুধু আংশিক সংজ্ঞা। তাই আমরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পুরো সংজ্ঞায় পরিচিত হতে চাই, একটি ফুল নয়, এবার একটি ফুলের তোড়া চাই।’ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সংমিশ্রণে হাজার বছরের যে ইতিহাস-ঐতিহ্যের যোগসূত্র, তা আবিষ্কার করে নাম দিয়েছিলেন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। এই জাতীয়তাবাদের ওপরই প্রতিষ্ঠিত তাঁর মন, মনন, চেতনা ও তাঁর রাজনৈতিক দর্শন। ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ছিল তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে ধর্মীয় নৈতিকতাকে সমাজের শৃঙ্খলা, সহনশীলতা ও ন্যায়বোধের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর বিশ^াস ছিল, নৈতিক ভিত্তি ছাড়া কোনো সমাজে স্থায়ী ন্যায়বিচার বা সততার পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়। ধর্মকে রাজনৈতিক আধিপত্যের হাতিয়ার নয়, বরং ধর্মকে রেখেছেন সামাজিক ও নৈতিক স্তরে, রাজনীতির ক্ষমতার খেলা থেকে আলাদা করেÑ একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তিতে। অর্থাৎ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মানেই অন্তর্ভুক্তি বা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি দর্শন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে উঠেছিলো এক সমন্বিত, বহুমাত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে, যেখানে দেশের প্রতিটি শ্রেণি, সম্প্রদায় ও সম্প্রদায়ের মানুষ নিজের অধিকার, দায়িত্ব ও মর্যাদা নিয়ে অংশগ্রহণ করতো। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া জাতির ভিত্তি ছিল স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। তবে বহুধর্মীয় ও বহুজাতিক সমাজে এই আদর্শ বাস্তবায়ন ছিল জটিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক সংকট রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ব্যাহত করেছিল। ১৯৭২ সালের সংবিধানের নীতির সঙ্গে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংযোগ স্থাপন কঠিন হয়ে পড়ে। সময়ের প্রয়োজনে শহীদ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রচিন্তায় আনেন এক নবতর দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় ধর্মকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ বা সামাজিক ন্যায়বিচার সুদৃঢ় করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন সতর্ক। ধর্ম কখনোই যেন রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার না হয়ে ওঠে। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে যুক্ত করেনÑ ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াস’। এটিকে অনেকে ধর্মীয় রাষ্ট্রনীতির দিকে পদক্ষেপ মনে করলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল এক ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবতা নির্ভর রাষ্ট্রনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে ধর্মকে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার ভিত্তি হিসেবে, তবে এর রাজনৈতিক ব্যবহার কঠোরভাবে পরিহার করা হয়েছে।
জিয়াউর রহমান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হলো সার্বিক জাতীয়তাবাদ। আমাদের আছে জাতিগত গৌরব, রয়েছে সমৃদ্ধিশালী ভাষা এবং আছে ধর্মীয় ঐতিহ্য। ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ বাসিন্দা। আমাদের আছে নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্ন। আর রক্তাক্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় অবগাহিত। একটা জাতীয়তাবাদী চেতনার মধ্যেই এত উপাদানের সমাবেশ ইতিপূর্বে আর দেখা যায়নি। তাই কেউ যদি বলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ধর্মকে অবলম্বন করে হচ্ছে না তবে ভুল হবে। ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকা বাংলাদেশী জাতির এক মহান ও চিরঞ্জীব বৈশিষ্ট্য। সেই সঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা আছে ‘লা ইকরা ফিদ্বীনে’ অর্থাৎ ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই। সুতরাং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ একদিকে যেমন ধর্মভিত্তিক নয়, তেমনি ধর্ম বিমুখও নয়। এ জাতীয়তাবাদ প্রত্যেক ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মীয় অধিকারকে নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে কেউ যদি বলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কেবল মাত্র ভাষাভিত্তিক তবে সেটাও ভুল বলা হবে। আবার কেউ যদি বলে, আমাদের কেবল মাত্র একটা অর্থনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে, কিন্তু কোন দর্শন নেই, সেটাও ভুল। আমাদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ফিলসফিতে এবজরশন পাওয়ার আছে। এলবোরুমও রয়েছে। যদি কোথাও ঘাটতি থাকে অন্যটি থেকে এনে পুরো করে দিতে পারবেন। আমাদের অলটারনেটিভ আছে। সে কারণেই আমরা টিকে আছি, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে।’
১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে একটি কর্মশালা উদ্বোধনকালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘কোন রাজনৈতিক আদর্শ ধর্মকে ভিত্তি করে হতে পারে না। একটা অবদান থাকতে পারে। কিন্তু ধর্মকে কেন্দ্র করে কখনোই রাজনীতি করা যেতে পারে না। অতীতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, ধর্মকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান সময়ে যখনই রাজনীতি করা হয়েছিল সেটা বিফল হয়েছে। কারণ ধর্ম ধর্মই। আমাদের অনেকে আছেন, যারা আমাদের দেশে যে বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে, সেগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতির রূপরেখা বানাতে চেষ্টা করেন, আমরা বারবার দেখেছি তারা বিফল হয়েছে। ধর্মের অবদান থাকতে পারে রাজনীতিতে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ধর্মকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। এটা মনে রাখবেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিক ফায়দার হাতিয়ার না করে, বরং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আধুনিক ও সৃজনশীল চিন্তার সমন্বয়ে গঠিত গণমুখী ও কল্যাণভিত্তিক রাজনীতি আজ বিশ^জুড়ে, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশগুলোতে, দিন দিন সমাদৃত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে, পেছনে তাকালে বোঝা যায়, চার দশক আগে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেই রাষ্ট্রনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছিলেন, তা ছিল গভীর দূরদৃষ্টি ও সময়ের চেয়েও এগিয়ে থাকা এক চিন্তার প্রতিফলন। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবিকতাকে বিকশিত করে জাতিকে আত্মসম্মানবোধে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন এবং সেইসঙ্গে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে রাজনীতির ভিত মজবুত করেছেন। এই পথচলার অন্তরালে ছিল বাস্তবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রনীতির একটি সুস্পষ্ট উপলব্ধি। ধর্মকে একেবারে অস্বীকার না করে, তার নৈতিক ও ঐতিহ্যগত গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তি গড়ে তুলতে চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে রাষ্ট্রের কাঠামোর সঙ্গে তা সাংগঠনিকভাবে যুক্ত করেন, একই সঙ্গে ধর্মকে ব্যবহার না করেই রাষ্ট্রের নৈতিক রূপান্তরে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেন। ফলে, জাতীয় ঐক্য ও ধর্মীয় সহনশীলতা নিশ্চিত করে এবং ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’Ñ এর আদর্শকে শক্তিশালী করে তোলে। তিনি ধর্মকে রাজনৈতিক বিভাজনের হাতিয়ার না বানিয়ে, বরং ধর্মীয় মূল্যবোধকে নৈতিকতার উৎস হিসেবে গ্রহণ করেন। পাকিস্তান আমলে ধর্ম রাজনৈতিক আধিপত্যের হাতিয়ার ছিল। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই তিনি ধর্মকে রাজনীতির বাইরে রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত বিশ^াস নয়, এটি নৈতিক আদর্শ, সামাজিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। ধর্মীয় নৈতিকতা ছাড়া শৃঙ্খলা, সততা ও মানবিকতা ধরে রাখা কঠিন। জিয়াউর রহমান ধর্মকে রাজনৈতিক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন, যার মধ্য দিয়ে সম্মান, সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক বিভাজন, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক সংকট মাথায় রেখে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এমন রাষ্ট্র নির্মাণে সচেষ্ট হন, যেখানে একদিকে ধর্মীয় মূল্যবোধের স্বীকৃতি থাকবে, অন্যদিকে ধর্মীয় গোষ্ঠীর রাজনৈতিক আধিপত্য ঠেকানো হবে। এটি ছিল সামাজিক ঐক্যের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ কৌশল। তিনি ধর্মীয় মূল্যবোধের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর বিশ^াস ছিল, ধর্মের নৈতিকতা ও বিজ্ঞানের যুক্তিবাদ একসাথে কাজ করলে সমাজে শান্তি, সাম্য ও উন্নয়ন সম্ভব। তিনি এক নতুন পথের সন্ধান দেন, যা ধর্মীয় মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। বিএনপির রাজনীতিতে এই দর্শনের প্রতিফলন ঘটে, যেখানে ধর্মীয় বহুত্ববাদ, সংখ্যালঘু অধিকার এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি অনুসরণ করা হয়। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধের স্বীকৃতি ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরোধিতাÑ এই দুইয়ের সমন্বয়ে একটি সহনশীল, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হয়। এই অবস্থান থেকেই বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি গড়ে ওঠে, যার আধুনিক ব্যাখ্যাকার হলেন তারেক রহমান। তাঁর ভাষায়, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মবিদ্বেষ নয়। ধর্মের প্রতি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা থাকতে হবে, কিন্তু জনগণের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি রাষ্ট্রকে সহনশীল হতে হবে।’
তারেক রহমানের ‘সবার বাংলাদেশ’ ধারণা একটি বহুত্ববাদী, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের প্রস্তাব করে, যেখানে ধর্ম, বর্ণ, জাতি বা গোষ্ঠী সব ভিন্নতা রাষ্ট্র সমান মর্যাদায় গ্রহণ করবে। হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা মারমা, চাকমা, বিড়ি, সাঁওতালÑ সব নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে সমানভাবে অধিকার দাবি করতে পারবে। এটি শুধু রাজনৈতিক ঘোষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাংলাদেশের রাষ্ট্রচিন্তার এক নতুন রূপায়ণ। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তারেক রহমান যে বিকল্প মডেল তুলে ধরেন, তা হলো, রাষ্ট্র থাকবে ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষ, কিন্তু জনগণের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি থাকবে সহনশীল। এই দৃষ্টিভঙ্গিই একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি। ‘ভিশন ২০৩০’ ও ‘৩১ দফা’ ঘোষণায় তারা স্পষ্টভাবে বলেছে, সব ধর্মের মানুষের সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি, অংশগ্রহণ ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের সমন্বয়ে বিএনপির দর্শন গঠিত হয়েছে, যেখানে গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিএনপি অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, দারিদ্র্য বিমোচন, বৈষম্য হ্রাস এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকারসহ সকল জনগণের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
লেখক : গবেষক ও রাজনৈতিক কলাম লেখক