মহররম মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন আশুরা। ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে এ দিনের গুরুত্ব ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকে ইসলাম ধর্মেও। মহানবী (সা.) এ দিন রোজা রাখতেন, সাহাবিদের রোজা রাখার প্রতি উৎসাহ দিতেন। দিনটি মাহাত্ম্যপূর্ণ হওয়ায় কল্যাণকর কাজ ও ইবাদতে কাটানোই উত্তম। তাই বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বে দিনটি বেশ মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়। এ ছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সুবিধার্থে দিনটিতে সরকারি ছুটিও থাকে।
আশুরার দিনটি সবচেয়ে আলোচিত নবীজির স্নেহের দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাতের কারণে। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, হজরত মুআবিয়া (রা.) মৃত্যুর আগে পুত্র ইয়াজিদকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিয়োগ করে যান। তবে ইয়াজিদ এই পদের যোগ্য না হওয়ায় অনেক সাহাবি তাঁর আনুগত্য মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। নবীনন্দিনী ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল হজরত হোসাইন (রা.)-ও ছিলেন তাঁদের একজন। হজরত মুআবিয়ার মৃত্যুর পর ইয়াজিদ ক্ষমতায় এলে কুফার অধিবাসীরা বিভিন্নভাবে ইমাম হোসাইনকে কুফায় আসার আবেদন জানান। তাঁকে খলিফা মানার প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে হোসাইন (রা.) পরিবার ও ভক্তদের নিয়ে কুফায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
এ সময় কুফার সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবনের জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় পাঠান। তাঁদের থেকে আনুগত্যের শপথ নিতে বলেন। মুসলিম ইবনে আকিল কুফায় গেলে সেখানকার প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দা তাঁর হাতে আনুগত্যের শপথ করেন। পাশাপাশি দ্রুতই যেন ইমাম হোসাইন (রা.) কুফায় আসেন— সে ব্যাপারে আবেদন করেন। তাঁদের আচরণ-আপ্যায়নে পরিস্থিতি ইতিবাচক মনে হয় মুসলিম ইবনে আকিলের। তিনি হজরত হোসাইনকে চিঠি লিখে সার্বিক পরিস্থিতি জানান। মুসলিমের চিঠি পেয়ে হোসাইন (রা.) কুফায় রওনা হন।
এইসব খবর যায় ইয়াজিদের কানে। তিনি পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে নিতে তৎক্ষণাৎ কুফার গভর্নর পরিবর্তন করে দুরাচার উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে নিয়োগ দেন। এবং মুসলিম ইবনে আকিলকে আটক করার নির্দেশ দেন। শঙ্কাপূর্ণ এই সময়ে চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী কুফাবাসী বিশ্বাসঘাতকতা করে
বসেন। মুসলিমকে গভর্নরের হাতে তুলে দেন। পাপাচারী ইবনে জিয়াদ তাঁকে নির্মমভাবে শহীদ করেন। এরপর হোসাইন (রা.) ইরাকের কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে ইবনে জিয়াদ সেনাবাহিনী পাঠিয়ে হোসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের পথ রুদ্ধ করেন। তাঁকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। কিন্তু নবীজির রক্ত যাঁর শরীরে, তিনি কি মিথ্যার সঙ্গে আপস করতে পারেন! হজরত হোসাইন (রা.) অত্যাচারীদের কাছে কোনোভাবেই মাথা নত করতে রাজি হননি। ফলে ১০ মহররম পবিত্র আশুরার দিন অত্যন্ত নির্মমভাবে তাঁকে শহীদ করা হয়।
কারবালার ঘটনা ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়। এ ঘটনা আমাদের জন্য শোকের, ত্যাগের ও অনুপ্রেরণার। কারবালা—সত্যের পথে আমৃত্যু অবিচল থাকার অনন্ত অনুপ্রেরণা, মিথ্যার সঙ্গে আপস না করার শিক্ষা। এই শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও জাতির জীবনে বাস্তবায়িত হলেই জীবন সার্থক হবে।