শেরপুরে গত ১২ অক্টোবর ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা শাহিনা বেগম শহরের উত্তরা ব্যাংকে দুই লাখ ৬৯ হাজার টাকা জমা দিতে যান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা গুনে নেওয়ার সময় দেখতে পায় এর মধ্যে ৫৩টি এক হাজার টাকার নোট জাল। শাহিনা বেগম শেরপুর হেড পোস্ট অফিস থেকে তিনবছর মেয়াদী সঞ্চয়ী হিসাব ভেঙে টাকা তুলে ব্যাংকে জমা করতে গিয়েছিলেন। তার আগে ৯ অক্টোবর একই পোস্ট অফিস থেকে টাকা তুলে সোনালী ব্যাংকে জমা দিতে গেলে স্থানীয় রশিদা ফ্যাক্টরির কর্মচারী নুরু মিয়ার ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার মধ্যে ২৫টি নোট জাল ধরা পড়ে। খবর দিলে পোস্ট অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে সেগুলো বদলে দেন। এক মাসের ব্যবধানে শেরপুরে পোস্ট অফিস, এটিএম বুথসহ বিভিন্ন স্থানে জাল টাকা সনাক্ত হওয়ার অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। ওই দিকে ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের নূরনগর হাউজিং সোসাইটির একটি বাসা থেকে দেশি-বিদেশি ২০ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং প্রতিবেশী দেশের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের নীলনকশার অংশ হিসেবে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকার সমমূল্যের জাল নোট বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এসব জাল নোট সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ ব্যবহার করে এতটাই নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে খালি চোখে সনাক্ত করা একেবারেই অসম্ভব। কেবল জাল টাকাই নয়, বরং তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রবেশ করানোর পরিকল্পনা করেছে। ইতোমধ্যে সিলেট এবং টেকনাফ দিয়ে অস্ত্রের একাধিক চালান প্রবেশ করানো হয়েছে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। জাল টাকা এবং অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করিয়েই পার্শ্ববর্তী দেশটি থেমে থাকছে না, বরং তারা নানা দিক থেকে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। এর মধ্যে দেশের জনশক্তি বাজার ধ্বংসের পাঁয়তারাও করছে তারা। দেশীয় চক্রের সঙ্গে মিলে বসনিয়া, ইটালি, সার্বিয়া, মাল্টা, পোল্যান্ড, সিংগাপুর এমনকি কানাডার মতো দেশের জাল ভিসা হুবুহু নকল করে তারা বাংলাদেশিদের সেসব দেশে পাঠিয়ে আমাদের শ্রমবাজার ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে রাসায়নিক গুদাম ও তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন, চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকার একটি বৃহৎ কারখানা ভয়াবহ আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া এবং একদিন পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনায় ধারাবাহিক আগুনের ঘটনাও সন্দেহজনক। খতিয়ে দেখা দরকার যে, নিছক দুর্ঘটনা নাকি পেছন থেকে দেয়া কারো ইন্ধনে পরিকল্পিত নাশকতার অংশ এসব অগ্নিকা-। এমনকি তহবিল সংকটের অযুহাতে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৩১৩ জন সদস্য কমিয়ে দেয়ার পেছনেও প্রতিবেশী দেশের কূটচালের আভাস দিচ্ছেন অনেকে।
১৯৭১ সালে নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোগিতা করলেও ভারত কখনোই আমাদের সৎপ্রতিবেশী হওয়ার নজির স্থাপন করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সময় থেকেই তারা নানা দিক থেকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে এসেছে আমাদের। যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে যার শুরু, এর পর ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে এবং বর্ষায় বন্যার পানিতে ডুবিয়ে মারার লাগাতার প্রচেষ্টা তারা চালিয়েই যাচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা প্রায় সবগুলো আন্তর্জাতিক নদীতেই বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ভাতে ও পানিতে ডুবিয়ে মারার সব ধরনের ফাঁদ পেতেছে। স্বাধীনতার পর প্রতিবেশীর বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী শাসনের অবসান হলে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, কৃষি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে তারা নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সবচেয়ে দৃষ্টিকটূভাবে তারা যেটি করে, সেটি হলো বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠিকে অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ, আশ্রয় এবং সর্বাত্মক সমর্থন দান। সমতলে তারা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে এমএন লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যুদ্ধে নামায়। টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে কাদেরিয়া বাহিনী কয়েক বছর পর বিলুপ্ত হলেও পার্বত্য গ্রামের দুর্গমতার কারণে শান্তিবাহিনী ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাদের আক্রমণে হাজার হাজার নিরীহ মানুষসহ সেনাবাহিনী, আনসার-ভিডিপি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর বহু সদস্য হতাহত হয়েছে। ২১ বছর পর ভারতের প্রিয় দল আওয়ামী লীগ পুনরায় বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে ১৯৯৭ সালে এক বিতর্কিত চুক্তির মাধ্যমে শান্তিবাহিনীকে বিলুপ্ত করার নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। চুক্তির শর্ত মোতাবেক শান্তিবাহিনীর সদস্যদের হাতে থাকা সকল অস্ত্র জমাদানের কথা থাকলেও তারা কিছু পুরানো ও পরিত্যাক্ত অস্ত্র জমা দেয়। অপরদিকে অধিকাংশ অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র তারা পাহাড়ে রেখে আসে এবং সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তির সুফল কুক্ষিগত করার পর রেখে আসা অস্ত্র দিয়ে আবারো সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় করে। শান্তিবাহিনীকে দিয়ে চুক্তি করানোর পর ভারত বিকল্প হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে গড়ে তোলে ইউপিডিএফ নামের আরো একটি সশস্ত্র সংগঠন। এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ে একে একে গড়ে উঠেছে ছয়টি সশস্ত্র সংগঠন। কেএনএফ হচ্ছে যার সর্বশেষ সংযোজন। এসব সংগঠনের প্রায় সবগুলোর শিকড় ভারতের সন্নিহিত রাজ্য ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, আসামে। সেখানে তাদের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ, অস্ত্রসহ অন্যান্য সকল সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে। এসব সংগঠনের মধ্যে যখন যাকে দিয়ে সুবিধা তখন তাকেই কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে ভারত।
১৯৯৭ সালে চুক্তির পর থেকে শান্তিবাহিনীর মাতৃ সংগঠন জেএসএসকে বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তাদের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে ভারত। অন্যদিকে ইউপিডিএফকে দিয়ে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরে শান্তি বিনষ্টের কাজে লাগায়। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতের অনুগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তাদের এই অপতৎপরতা বেড়েছে বহুমাত্রায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পর ইউপিডিএফকে দিয়ে পাহাড়ে সংঘাতের উসকানি দেয়া হয়। আগস্ট মাসে তারা বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মসূচি দিয়ে পাহাড়ে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করে। তাতে খুব বেশি সাড়া না পেয়ে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে খাগড়াছড়িতে কয়েক দিনের ব্যবধানে দুজন বাঙালিকে পিটিয়ে হত্যা করে পরিস্থিতি ঘোলা করতে অনেকটা সফল হয়। এর ফল স্বরূপ পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গায় কয়েকজন হতাহত এবং শতাধিক ঘর-বাড়ি-দোকান পুড়ে ছাই হয়। শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে পরিস্থিতি। গত বছরের ওই ঘটনার বর্ষপূর্তি পালনের অযুহাতে এবারো উসকানিমূলক কর্মসূচি দেয় ইউপিডিএফ। ১৯ সেপ্টেম্বর তারা মিছিল-মিটিং করে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে সফল না হওয়ায় ভিন্ন কৌশল বেছে নেয়। ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এক মারমা কিশোরীর কথিত ধর্ষণের জন্য বাঙালিদের দায়ী করে আন্দোলনের নতুন ছক সাজায় তারা। ঘটনাটি প্রমাণিত হওয়ার আগেই এবং অভিযুক্ত হিসেবে একজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার পরও তারা বিচারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করে। মিছিল-মিটিং, হরতাল-অবরোধ এবং হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে খাগড়াছড়িকে অস্থিতিশীল করে তোলো। এমনকি তারা শহরে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। তাদের প্রতিহত করতে গেলে সেনাবাহিনীর উপরেও হামলা চালায়, গুলি বর্ষণ করে। একপর্যায়ে জম্মু ছাত্র-জনতার ব্যানারে আন্দোলনের নামে ইউপিডিএফ তাদের এই অপতৎপরাতে পার্বত্য তিন জেলাতেই ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানবাসী সতর্ক থাকায় ওই দুই জেলায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। তবে, খাগড়াছড়ি সদরের বাইরে গুইমারা উপজেলায় সংঘাত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় তারা। সেখানে শেষ পর্যন্ত ৩ জন নিহত, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহতও হয়। অগ্নিসংযোগের কারণে রামসু বাজারের বেশকিছু দোকান ও বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় মোটরসাইকেল, সিএনজি, টমটম, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। এদিকে খাগড়াছড়ির সদর হাসপাতালের অভিজ্ঞ গাইনোকলজিস্ট জয়া চাকমার নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড কথিত ভিকটিম মারমা কিশোরীর শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানায়। ভিক্টিমের এই মেডিক্যাল রিপোর্ট সামনে আসার পর কারো বুঝতে বাকী থাকে না যে, আসলে এর পেছনের কারণ কী ছিল। কেননা, ভিক্টিম এবং তার পিতার ভিন্ন ভিন্ন ভাষ্য, ঘটনাস্থল, কথিত অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হওয়া নয়ন শীলের ঘটনার সময় পূজার কেনাকাটা করার সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য আলামত দেখে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টির সত্যতা নিয়ে আগেই সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তারি পরীক্ষার সনদ পাওয়ার পর সেটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত, অগ্নিসংযোগ ঘটনার সবটুকুই যে ভারতের মদদে ইউপিডিএফের সাজানো তা খাগড়াছড়িবাসীর কাছে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। এমনকি তাদের ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বেশ কিছু গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। কিন্তু তারপরও চিহ্নিত একশ্রেণির দেশি-বিদেশি মিডিয়া, মানবাধিকারের ব্যানারে থাকা কিছু এনজিও কর্মী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা কথিত কিছু বুদ্ধিজীবী এই ঘটনার জন্য বাঙালি এবং সেনাবাহিনীকে দায়ী করে সংবাদ ও মন্তব্য প্রচার করে গেছে, এখনো করছে। এমনকি মেডিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশের পরও কিছু মিডিয়া একপেশে রিপোর্ট করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে তাদের আপত্তি থাকলে ভিক্টিমের পিতাকে উচ্চতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পুলিশ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। এমনকি খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা নিজেও ভিক্টিমের পিতাকে পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু তাতেও তিনি উচ্চতর পরীক্ষার জন্য রাজি হননি। এমন অবস্থায় মেয়েটির উচ্চতর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে এগিয়ে আসেনি কোনো বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী কিংবা কোনো সংগঠন। উল্টো এটিকে ধর্ষণের ঘটনা বলে উল্লেখ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিবৃতি দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, একশন এইড বাংলাদেশ, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনসহ ১৭টি সংগঠন। এই ঘটনার পর বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বজলুর রশীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী (ক্বাফী রতন), বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, কমিউনিস্ট লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নেতা আবদুল আলী, জাতীয় গণফ্রন্টের নেতা রজত হুদা, কামরুজ্জামান ফিরোজ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নেতা হারুন অর রশীদ, মার্জিয়া প্রভা, সত্যজিৎ বিশ্বাস ও সাঈদুল হক খাগড়াছড়ি পরিদর্শন করেছেন। সংঘাতের ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুরুতে তারা শুধু পাহাড়িদের সাথেই দেখা করেছেন। এমনকি গুইমারাতে ঘটনাস্থল থেকে দূরে এবং দুর্গম এলাকায় গিয়ে ইউপিডিএফ নেতাদের সাথেও মিটিং করেছেন। কিন্তু বাঙালিদের সাথে কথা বলতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের নজরে এলে তারা এর প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে নামকাওয়াস্তে তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালি এলাকাও পরিদর্শন করেন। কিন্তু পরিদর্শন শেষে তারা যে বিবৃতি দেন সেটা ছিল সম্পূর্ণভাবেই একপাক্ষিক। ধর্ষণের কোনো ঘটনার প্রমাণ না থাকা স্বত্ত্বেও তারা ওই মারমা কিশোরীকে ধর্ষিত হিসেবেই উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তারা কল্পিত ধর্ষক ও হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিও জানান।
এসব ঘটনা এবং এর পেছনে থাকা কুশীলবদের চিনতে দেশপ্রেমিক কোনো নাগারিকের বাকী থাকার কথা নয়। তারপরও এদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে দেশবাসীকে। কেননা, সামনেই জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে বানচাল করতে ভারতসহ অনেকেই নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। গণঅভ্যুত্থানে নিজেদের পরম অনুগত আওয়ামী লীগের পতনের কারণে ভারত ক্ষোভে ফুঁসছে। আর সেটা তারা লুকিয়েও রাখেনি। ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় দিয়ে, বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে, বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে, ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়ে সেটার প্রমাণ তারা দিয়ে যাচ্ছে। এখন জাল টাকা, অবৈধ অস্ত্র, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও জাল ভিসাসহ যত ধরনের কৌশল আছে তার সবকিছু নিয়েই যে তারা মাঠে নামবে এতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠিগুলোকে উসকে দিয়ে অস্থিতিশীল করতে চাইছে দেশকে। পাশাপাশি তাদের অনুগত মিডিয়া, তথাকথিত মানবাধিকার কর্মী ও বাম ঘরানার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদেরও কাজে লাগাচ্ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে তাদের এই অপতৎপরতা ততই বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে এসব ব্যাপারে অধিক সচেতন থেকে তা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং দেশবাসীকেও সদা সতর্ক থাকতে হবে।